প্রশ্নঃ ধাঁধা বলতে কী বোঝ ? কয়েকটি ধাঁধার দৃষ্টান্ত দিয়ে ধাঁধার গুরুত্ব নিরূপণ কর ।
উত্তরঃ একসময় রাজা থেকে প্রজা, আমির থেকে গরিব, বুড়ো থেকে শিশু সবার আনন্দ বিনোদনের মাধ্যম ছিল ধাঁধাঁ । কিন্তু বিশ্বায়ন এর প্রভাবে ও দিন দিন যৌথ পরিবার ব্যবস্থা ভেঙ্গে যাওয়ার কারণে আজ লোকসংস্কৃতির আর পাঁচটা শাখার মতো এই শাখাটিও হুমকির সম্মুখীন ।
‘ধন্দ’ শব্দ থেকে ধাঁধা শব্দটির উৎপত্তি । যার অর্থ সংশয় বা দুরূহ সমস্যা। এটি মূলত একটি জিজ্ঞাসা। মূল বিষয়কে আড়াল করে শব্দের জাল বুনে তা করা হয়ে থাকে । ফলে উত্তরদাতাকে চিন্তা করে বা মাথা ঘামিয়ে উত্তর দিতে হয়।বঙ্গে ধাঁধার নাম বৈচিত্র্য রয়েছে । উত্তরবঙ্গে ছিল্কা, ছটকি, শিল্কি, শোলক বিভিন্ন নাম পাওয়া যায়। সাধু বাংলায় একে বলে প্রহেলিকা বা প্রহেলি । অনেক জায়গায় একে হেঁয়ালিও বলে । কেউ আবার ধাঁধাকে ‘a sort verbal puzzle’ বলে অভিহিত করেছেন ।
কয়েকটি ধাঁধাঁর দৃষ্টান্ত তুলে ধরছি-
১। আমি যখন এলাম, তুমি কেনো এলে না,
তুমি যখন এলে, কতো কি খেলে,
একবার গেলে, ফিরে তুমি এলে,
কিন্তু হিয়! বৃদ্ধকালে আমায় ছেড়ে গেলে!
উত্তরঃ দাঁত
২। আগায় খস খস গোড়ায় মৌ
যে বলতে না পারবে
সে রাম ছাগলের বউ
উত্তরঃ আখ / ইক্ষু
৩। আমি থাকি খালে বিলে, তুমি থাক ডালে
একদিন দেখা হবে মরণের কালে।
উত্তরঃ মাছ ও মরিচ।
৪। আম নয়, জাম নয়, গাছে নাহি ফলে
তবু সবাই তারে ফল নাম বলে।
উত্তরঃ পরীক্ষার ফল / অংকের ফল।
৫। আমি তুমি একজন দেখিতে এক রূপ,
আমি কত কথা কই তুমি কেন থাক চুপ।
উত্তরঃ নিজের ছবি।
৬। আছাড় দিলে ভাঙে না,
টিপ দিলে সয় না।
উত্তরঃ ভাত।
ধাঁধাঁর গুরুত্বঃ
ক) নিরক্ষর জনসমাজে শিক্ষার অঙ্গস্বরূপ ধাঁধাঁ ।
খ) ‘বুদ্ধির অনুশীলন কিংবা জ্ঞানের চর্চা ইহার চরম লক্ষ্য নহে, ইহার চরম লক্ষ্য নির্মল হাস্যরস সৃষ্টি।’- আশুতোষ ভট্টাচার্য / বাংলার লোকসাহিত্য
গ) আদিম মানুষের মননশীলতার প্রথম উন্মেষক ধাঁধা ।
ঘ) ধাঁধার মধ্য দিয়েই লোকসাহিত্য সৃষ্টির প্রথম প্রয়াস লক্ষ্য করা যায় ।
ধাঁধা আকারে ক্ষুদ্র হলেও এর মধ্যে জাতির বুদ্ধির পরিচয় ও বিচারশক্তির প্রকাশ ঘটে । তাই ধাঁধার মধ্যে একদিকে যেমন একটি জাতির সামগ্রিক মননশীলতার পরিচয় মেলে, তেমনি জীবন চর্যারও পরিচয় পাওয়া যায় । তাই লোকসমাজে ধাঁধার গুরুত্ব অপরিসীম ।
Post a Comment